শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

ডেঙ্গু রোগী নিয়ে হিমশিম অবস্থায় হাসপাতালগুলো

রিপোর্টারের নাম / ১ টাইম ভিউ
আপডেটের সময় : শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন

দুই বছরের নিয়াজ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। শয্যা না থাকায় মেঝেতে রেখেই চলছে চিকিৎসা। ক্যানুলা লাগানো হাতে ধরে আছে চকলেট। পাশে বসে পাখা দিয়ে বাতাস করছেন নিয়াজের মা ফাহমিদা বেগম। তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে জ্বর ছেড়ে গিয়ে গা ঘামতে শুরু করেছে। চার দিন আগে ছেলের জ্বর আসে। টেস্ট করালে দেখা যায় সে ডেঙ্গু আক্রান্ত। এরপর প্রচণ্ড বমি আর পেটে ব্যথা শুরু হলে হাসপাতালে নিয়ে আসি। শয্যা ফাঁকা না থাকায় মেঝেতে রেখেই চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। ছেলেকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমাদের শান্তি নেই।’ এ হাসপাতালের আট তলার শিশু ওয়ার্ডে শয্যার তুলনায় কয়েক গুণ রোগী ভর্তি। হাঁটাচলার মতো অবস্থা নেই। অন্য ওয়ার্ডগুলোরও একই অবস্থা। মেঝে, বারান্দা, করিডোরে রোগী। এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। রাজধানীর অন্য হাসপাতালগুলোর পরিস্থিতিও একই। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালেই তিল ধারণের জায়গা মিলছে না। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্তের রেকর্ড ভাঙছে। বাড়ছে মৃত্যুও। ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ঊর্ধ্বমুখী। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, গতকাল সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৮৪ জন, মারা গেছেন ১০ জন। এর মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১ হাজার ১৩১ জন এবং ঢাকার বাইরের ১ হাজার ৪৫৩ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ৪১৬ জন, মারা গেছেন ২৬১ জন। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৯ হাজার ২৬৪ জন। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৪ হাজার ৮৬৯ জন। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৪৮২ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ২ হাজার ৩৮৭ জন। সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রশীদ-উন-নবী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতিদিন হাসপাতালে ৭০-৮০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়। রোগীর চাপ ঊর্ধ্বমুখী। আমাদের এখানে আটটি মেডিসিন ইউনিট ও তিনটি শিশু ইউনিট রয়েছে। বর্তমানে ৩ শতাধিক ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি আছেন। হাসপাতালের করিডোর, মেঝে, বারান্দা সব জায়গায় রোগী। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না। হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের সেবা দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে রোগী আসতে অনেক সময় দেরি করে ফেলে, তখন পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে।’ রাজধানীর মহাখালী ডিএনসিসি ডেঙ্গু ডেডিকেটেড হাসপাতালে ভর্তি আছেন তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা লিয়াকত আলী। মশারির ভিতরে শুয়ে জ্বর, মাথাব্যথায় কাতরাচ্ছেন তিনি। বাবার পাশে বসে সেবাশুশ্রƒষা করছেন ছেলে লতিফ। তিনি বলেন, ‘চার দিন আগে কাজ থেকে ফিরে বাবা অসুস্থ বোধ করেন। রাত হতেই তীব্র জ্বর আসে। পরদিন টেস্ট করালে দেখা যায় ডেঙ্গু পজিটিভ। চিকিৎসকের পরামর্শে বাসায় রেখে চিকিৎসা করছিলাম। কিন্তু জ্বরের সঙ্গে বমি, মাথাব্যথা কমছে না। এক সময় দেখি জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তখন দ্রুত এনে হাসপাতালে ভর্তি করেছি। আমাদের পাড়ায় আশপাশে অনেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত।’ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাদিয়া সুলতানা রেশমা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাসপাতালে বর্তমানে ৫০০ জনের বেশি রোগী ভর্তি আছেন। আইসিইউতে ভর্তি আছেন ৪০ জন। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী সেবা নেন। রোগীর চাপ তো আছেই। একজন ডিউটি ডাক্তারকে ৬০-৭০ জন রোগীর সেবা দিতে হচ্ছে। এ হাসপাতালে ৬০০ থেকে ৮০০ শয্যা করা নিয়ে পরিকল্পনা চলছে বলে শুনেছি। শয্যা, চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী বাড়লে আরও বেশি রোগী এখানে সেবা পাবেন। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর চাপ। অধিকাংশ হাসপাতালেই শয্যা ফাঁকা নেই।

ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আশীষ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেউ ফোন করলে শুধু একটা কথাই বলতে হচ্ছে, আমাদের হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই। বর্তমানে ৬০ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৩৫-৪০ জনই শিশু। অধিকাংশের বয়স ৮ থেকে ১৫ বছর। অধিকাংশ রোগী আমরা পাচ্ছি যাদের ডেঙ্গু জ্বর টেস্টে এনএস১ নেগেটিভ কিন্তু ডেঙ্গুর সব উপসর্গ রয়েছে। এ হাসপাতাল সাধারণত সংকটাপন্ন রোগীদের বিশেষায়িত সেবার জন্য পরিচিত। অন্য হাসপাতালে পরিস্থিতি খারাপ হলে সেখানে চিকিৎসার সুযোগ না থাকলে এখানে রেফার্ড করা হয়। তবে বেশি দেরি হলে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।’ এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘এ সময় শিশুদের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। শিশুদের বাসায় ফুল শার্ট, ফুল প্যান্ট পরিয়ে রাখতে হবে। নিজেদের সচেতন হতে হবে, বাসা এবং এর চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে।’

দলীয় নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধিদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ জন্য তিনি বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকাল রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব পর্যায়ের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং আমাদের দলীয় নেতা-কর্মীদের বলব, এখন ডেঙ্গুর প্রভাব বেশি। এডিস মশা দমনে কাজ করতে হবে। মশার প্রজনন স্থল ধ্বংস করে, জমে থাকা পানি অপসারণ এবং বাড়িঘর ও এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের জন্য কাজ করতে হবে সবাইকে। আওয়ামী লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ, যুব মহিলা লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, জাতীয় শ্রমিক লীগ ও মহিলা শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীর পাশাপাশি দলীয় সংসদ সদস্য ও সব জনপ্রতিনিধি, ওলামা-মাশায়েখসহ সবার প্রতি নিম্নরূপ নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এসব নির্দেশনা বিজ্ঞপ্তি আকারে জানানো হয়। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সবাইকে মশারি ব্যবহার করতে হবে। বাসাবাড়ি, ফ্ল্যাট, অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টারসহ সব চিকিৎসা কেন্দ্র, বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন প্রভৃতি জায়গায় কোথাও যেন পানি জমে না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও মশামুক্ত রাখতে হবে। নিজে সচেতন থাকার পাশাপাশি শহর, গ্রামগঞ্জ, পাড়া-মহল্লা ও হাট-বাজারে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। সব এলাকায় ডেঙ্গুরোধে অভিযান চালাতে হবে।

সংগ্রহীত নিউজ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Developed by: BD IT AGNECY