রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনে ২টি সিগারেট কোম্পানি অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে

রিপোর্টারের নাম / ১ টাইম ভিউ
আপডেটের সময় : রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনে ২টি সিগারেট কোম্পানি অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি দেশের ১৬টি জেলায় ২২,৭২৩টি বিক্রয়কেন্দ্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রায় সাড়ে ২৭ হাজার আইন লঙ্ঘনের চিত্র পাওয়া গেছে। জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালসহ জনবহুল এলাকায় তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার হার সবচেয়ে বেশি। এই অবাধ প্রচারনার মূল উদ্দেশ্য কিশোর ও তরুণদেরকে ধূমপানে আকৃষ্ট করা। যা ২০৪০ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ গড়ার লক্ষ্যকে ব্যহত করছে।

আজ ১৭ আগস্ট ২০২৩, বুধবার, সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে “দেশব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘন : সিগারেট কোম্পানি বেপরোয়া” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এর আয়োজনে, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি, বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি (বিএনটিটিপি), এইড ফাউন্ডেশন, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠন, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ডেভলপমেন্ট অ্যাকটিভিটিজ অব সোসাইটি (ডাস), গ্রামবাংলা উন্নয়ন কমিটি, মানস- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতি (নাটাব) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটির নির্বাহী পরিচালক এ কে এম মাকসুদ। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ডাস্ এর টিম লিডার আমিনুল ইসলাম বকুল, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক বজলুর রহমান, অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, নাটাবের প্রজেক্ট ডিরেক্টর এ কে এম খলিলউল্লাহ, মানস এর প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর উম্মে জান্নাত, এইউ ফান্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার আবু নাসের অনিক। সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান।

সভায় বক্তারা বলনে, সিগারেট কোম্পানিগুলোর মদদে ঢাকার রেস্টুরেন্টগুলো ধূমপানের আখড়ায় পরিনত হয়েছে। দুইটি বিদেশী তামাক কোম্পানির সরাসরি মদদ ও অর্থায়নে দেশে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ধূমপানের স্থান গড়ে উঠছে যেখানে তরুণদের আনাগোনাই সবথেকে বেশী। এতে কিছু কিছু মালিক সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করছেন যা ক্রমেই ভয়াবহতায় রূপ নিচ্ছে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে এটা বন্ধ করতে হবে।

তারা আরও বলেন, নাটক, সিনেমায় জনপ্রিয় অভিনয় শিল্পীদের ধূমপানের দৃশ্য প্রদর্শন আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। তামাক কোম্পানিই এসব নাটক, সিনেমায় পরোক্ষভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বর্তমানে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে নির্মিত ওয়েব সিরিজগুলো তরুণদের মাঝে অধিক জনপ্রিয়। এ সুযোগে তরুণদের মধ্যে ধূমপানসহ তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহারের দৃশ্য দেখানো হচ্ছে যা তাদের ধূমপানে উৎসাহিত করছে। অতিদ্রুত কোম্পানির এ কূটকৌশলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ই-সিগারেটের ভয়াবহতা সম্পর্কে বক্তারা বলেন, তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে ই-সিগারেটকে নিরাপদ হিসেবে তুলে ধরে তরুণদেরকে ই-সিগারেটে আসক্ত করছে। বিভিন্ন প্রচারণার মাধ্যমে তারা ই-সিগারেটকে আধুনিক ফ্যাশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। ই-সিগারেট নেশাদায়ক এবং ক্ষতিকর বিধায় ভারতসহ ইতোমধ্যে বিশ্বের ৪৭টি দেশ ই-সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় অতিদ্রুত বাংলাদেশ সরকারকে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে।

বাজারে সিগারেট বিক্রয়ের ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির মূল্য কারসাজি নিয়ে তারা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরোর গবেষণায় উঠে এসেছে কোম্পানিগুলো সিগারেটের প্যাকেটে একটি খুচরা মূল্য লেখে, কিন্তু খুচরা বিক্রির সময় তারা তা ৫% থেকে ২০% পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি করে। খুচরা বিক্রয় মূল্যের ওপর কর পরিশোধের বিধান থাকলেও তারা শুধুমাত্র প্যাকেটে লেখা মূল্যের ওপরই কর পরিশোধ করে। এনবিআরকে অতিদ্রুত এমআরপি’র বিধান বাস্তবায়ন করে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ বন্ধে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়েছে, দ্রুততম সময়ে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনী চূড়ান্ত করা; ‘এফসিটিসি অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘কোড অব কন্ডাক্ট’গ্রহণ; জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ দ্রুত চূড়ান্ত এবং দেশব্যাপী যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করা; জাতীয়, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটিসমূহ সক্রিয় করা, কমিটির ত্রৈমাসিক সভা নিয়মিতকরণ, সভার সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা; আইন লঙ্ঘণের দায়ে তামাক কোম্পানি/প্রতিনিধিকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি জেল প্রদান; তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কার্যক্রম মনিটরিং ও স্থানীয় তামাক বিরোধী সংগঠনগুলোকে যুক্ত করে কোম্পানির বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা; মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে একটি শক্তিশালি তামাক কর নীতি প্রণয়ন বাস্তবায়ন করা।

সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও অর্ধশতাধিক সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Developed by: BD IT AGNECY